অর্থনীতির পথে

বাংলা ভাষায় অর্থনীতি নিয়ে লেখালেখির সূচনা দীর্ঘদিনের এবং ভবতোষ দত্ত সেখানে অবশ্যই একটা বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। অর্থনীতি বিষয়ে লেখা মানেই যেখানে জটিল যুক্তি-তর্কের অবতারণা, ভবতোষ দত্তের লেখা সেখানে বারে বারে দেখিয়ে দেয় কী ভাবে সরল সাবলীল ভঙ্গিতে জটিল বিষয়কেও হাজির করা সম্ভব। ভারতীয় অর্থনীতি-চিন্তার ধারাবাহিক আলোচনা করতে বসে তিনি রাজা রামমোহন রায় থেকে একেবারে বিনয়কুমার সরকার পর্যন্ত মোট আটজন ভারতীয় মনীষীর অর্থনৈতিক ভাবনার বিশ্লেষণ করেছেন, যা কেবল অর্থনীতির পড়ুয়া নয় সমাজ বিজ্ঞানের সমস্ত শাখার আগ্রহী পাঠককে ঋদ্ধ করবে।
ভবতোষ দত্তের জন্ম ১৯১১ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রবাদপ্রতিম অর্থনীতির অধ্যাপক। ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত ধনবিজ্ঞান নামক প্রথম বাংলা বইটিতে অ্যাডাম স্মিথ থেকে আলফ্রেড মার্শেল ও এ সি পিগুর তত্ত্বের সহজ ও সাবলীল ব্যখ্যা দেন ভবতোষ দত্ত।  

বঙ্গীয় অর্থনীতি পরিষদ তাঁকে নির্বাচিত করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করে সম্মানিক ডি লিট। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় পদ্ম বিভূষণ। তাঁর আত্মজীবনী আট দশক বইটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার দেয় রবীন্দ্র পুরস্কার। ১৯৯৭ সালের ১১ই জানুয়ারি কলকাতায় ভবতোষ দত্তের মৃত্যু হয়।

বই ও পাঠের ভবিষ্যৎ

নির্ঝর সংকলন

বই তো পড়ার জন্যেই, কিন্তু কেন পড়ি কীভাবে পড়ি? আদতে এত কিছু ভেবেও কি আমরা বই পড়ি? বই পড়ুয়ার কাল কিংবা রুচি তো তার একান্ত নয়। পাঠের রুচি একটু একটু করে তৈরি হয় এবং বদলায়ও। শ-খানেক বছর আগে পাঠক আর পাঠিকারা কি একই ধরনের বই পড়ত? ছোটোদের হাতেই-বা তুলে দেওয়া হত কী ধরনের বই? পাঠ্যবস্তু নির্বাচনের পেছনেও কি থেকে যেত না সামাজিক দৃষ্টিনির্দেশ কিংবা লিঙ্গচেতনার ছাপ? আইন করে কেন পোড়ানো হয়, নিষিদ্ধ হয় বই কিংবা আইনি জটিলতা সত্ত্বেও কেন নকল হয় বই অথবা ছড়িয়ে পড়ে নকল পিডিএফ? আবার প্রযুক্তির উন্নতি ও মাধ্যমের বদলে কি ঘটে যায় না আমাদের পাঠকসত্তার রূপান্তর? পাঠ্যবস্তুর সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের মধ্যেই লুকিয়ে এমন বহুতর জিজ্ঞাসা। এর সঙ্গে রয়েছে পঠনক্রিয়ার খুঁটিনাটি, মস্তিষ্কের মধ্যে ঘটে চলা স্নায়বিক কৃৎকৌশলের বিষয়টি। বই ও পাঠের ইতিহাস আর বর্তমান গতিপ্রকৃতির অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের জন্য রাখা হল এগারোটি নিবন্ধ, ন-টি বইয়ের আলোচনা এবং বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি শব্দের সংক্ষিপ্ত টীকা।  প্রকাশক বিদ্যাসাগর আর এলিজাবেথ ইয়েটস পরিচালিত কুলা প্রেস—রইল প্রকাশনাজগতের বৃত্তান্ত। সঙ্গে অধুনালুপ্ত অবভাস পত্রিকার পূর্ণাঙ্গ সূচি।

স্মৃতি সত্তা সংলাপ

দীপেশ চক্রবর্তী

‘বাংলায় আমি যখন লিখি বা কথা বলি, তখন আমার মনের মধ্যে ধরে রাখা এক স্মৃতির দেশের সঙ্গে কথা বলি। দেশ বদলে গেছে, আমিও বদলে গিয়েছি, কিন্তু মায়ায় ধরে রাখি কিছু বন্ধুত্ব, কিছু ভালোবাসার বন্ধন, কিছু সঙ্গের লোভ। এসব কথা ইংরেজিতে পেশাদারি রচনায় সচরাচর প্রকাশ পায় না। অথচ আমার ইতিহাসবিদ মনকে এই মায়ার বন্ধনই বলে দেয় অতীত আমাদের কাছে কত বড়ো একটা কিছু। একথা বাঙালি বা কোনো দিশি বন্ধুকেই বলতে পারি, অবুঝ অন্যরা তো শুধু  “নস্টালজিক”  বলে গাল দেবে! এই সহমর্মিতার সন্ধানও কিন্তু আমার অতীত-অনুসন্ধানেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ 

তিনটি বর্গে বিন্যস্ত হলেও এই লেখাগুলো বায়ুনিরুদ্ধ সংকলন নয়। দীপেশ চক্রবর্তীর লেখায় যেমন থাকে যে পরতে পরতে খুলে যায় চিন্তাভাবনার জগৎ, এও তাই। প্রশ্ন উঠতে পারে যে স্মৃতি আর সত্তার মিল অমিল নিয়ে। কিন্তু একবার যদি ভেবে দেখি আমাদের এই বর্তমান, প্রতিদিনের সত্তার মাঝে অনেক পুরোনো কথা রয়ে যায়, তাহলে সময়কথন আর সেইসব সময়ের আপাত ভগ্নাংশ কখন বুঝি ইতিহাসের আখ্যান হয়ে ওঠে। এই ইতিহাস আমাদের যাপিত অভিজ্ঞতারই আরেক বৃত্তান্ত।

দীপেশ চক্রবর্তী জন্ম ১৯৪৮ সালে ১৫ ডিসেম্বর, কলকাতায়। প্রেসিডেন্সি কলেজে স্নাতকস্তরে পদার্থবিদ্যা ও আইআইএম থেকে এমবিএ-র পাঠ শেষ করে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-তে যান ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করতে। ১৯৮৪ সালে শ্রমিক ইতিহাসের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে শিকাগো ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের লরেন্স এ কিম্পটন ডিস্টিংগুইশ্‌ড সার্ভিস প্রফেসর। ইতিহাস-চর্চায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রথম ভারতীয় হিসেবে পেয়েছেন টয়েনবি ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০১৪)। অবসরে আড্ডা দেওয়া, প্রচলিত গানের প্যারডি করা আর ছড়া লেখার মধ্যে পান প্রাণের আরাম।

শান্তিনিকেতনের চিঠি: আমার শিক্ষাজীবন

ওয়েন্ডি ডনিগার

‘রেনেসাঁস রমণী’ ওয়েন্ডি ডনিগারের গবেষণা মূলত দুটো প্রধান অক্ষকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে: হিন্দুধর্ম আর পুরাণকথা। কিন্তু এর বাইরেও তাঁর বিশেষজ্ঞতার প্রশস্ত বর্ণালী চোখ ঝলসে দেয়। স্তালিনপন্থী মা আর উদারপন্থী বাবার কন্যা, একদা ব্যালেরিনা হতে-চাওয়া এই ইহুদি সংস্কৃত স্কলার ১৯৬০-এর দশকে বাইশ বছর বয়সে হার্ভার্ড থেকে কলকাতা ও শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন গবেষণার কাজে। শান্তিনিকেতনে জ্যোৎস্নারাতে সবার সঙ্গে তিনিও যেতেন বনে, তিনিও আকাশ ভরতেন গানে, নাচতেন মণিপুরী। দারিদ্র্য-আকীর্ণ কলকাতায় রবি শঙ্করের উচ্ছলতা আর আলি আকবরের  আত্মমগ্নতা তাঁর সামনে খুলে দিত স্বর্গের নূতন নূতন দ্বার। যামিনী রায় খুলে দিতেন পটচিত্রের ভাণ্ডার। মাকে লেখা তাঁর চিঠিগুলিতে সেইসব টাটকা অভিজ্ঞতার অলৌকিক উন্মোচন ঘটেছিল।  আজ অশীতিপর ওয়েন্ডির এই স্মৃতিচারণ হাওয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে অধরা এক ব্যাকুলতা। একদিকে ইতিহাস, পুরাণ, রাজনীতি, সাহিত্য, সংগীত, অন্যদিকে ব্যক্তিগত আনন্দবেদনার এ এক অভাবনীয় উদ্ভাস। তাঁর চোখ দিয়ে আমরাও আমাদের নতুন করে চিনছি। বাংলায় এই অকুতোভয় বিদুষীর বই এই প্রথম অনুবাদ হল।

‘‘বিশ্বের বিদ্বৎসমাজে ও ভারতবিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে অধ্যাপিকা ডনিগার যে একজন অগ্রণীর ভূমিকায় থেকেছেন, এ নিয়ে তর্কের অবকাশ নেই। ভারতবর্ষেও তাঁর বহু অনুরাগী পাঠক-পাঠিকা আছেন, যাঁরা এই বইয়ের প্রকাশনায় আন্তরিকভাবে খুশি হবেন। . . . স্মৃতি, নানান-রসে-জারানো জীবনবোধ ও বিশ্লেষণী বুদ্ধির একত্র সহবাস তাঁর গদ্যে। অনুবাদকের গুণে ভাষান্তরে তা একটুও মলিন হয়নি। . . . আমরা যেমন পৃথিবীর অন্য অঞ্চল চিনতে গিয়ে নিজেদের নতুন করে দেখতে পাই, পাশ্চাত্যের পণ্ডিতেরাও তেমন আমাদের চিনতে গিয়ে নিজেদের তুলনামূলকভাবে চেনেন। বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে আদান-প্রদানের মূল কথা এইটাই: নিজের বাইরে না গেলে নিজেকে জানা হয় না। আর এই জানারও কোনো শেষ নেই। সেই কারণেই হয়তো এই বইটি পড়ার পরও রবীন্দ্রনাথের সেই লাইনটিই আবার মনে পড়ে, ‘আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না’। তার সঙ্গে এ-সত্যও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আধুনিক লেখাপড়ার গোড়ায় রয়েছে এই বিশ্বনাগরিকতার অনুসন্ধান। সেই কারণেই ভিনদেশি গবেষকদের মধ্যে বন্ধুত্ব, সই-পাতানো, অন্তরঙ্গতা—যেসব গল্পকথা এই বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে।’’

—দীপেশ চক্রবর্তী

ওয়েন্ডি ডনিগার জন্ম ১৯৪০-এর ২০ নভেম্বর, নিউ ইয়র্কে।  হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড থেকে শুরু করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ, বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। বর্তমানে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিভিনিটি স্কুলের মির্চা এলিয়াদ ডিস্টিংগুইশ্‌ড সার্ভিস প্রফেসর। ১৯৮৯ সালে ডনিগার আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এর ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন। তাঁর গবেষণা ও শিক্ষকতার পরিসর মূলত হিন্দুত্ব ও পুরাণ এই দুটো বিষয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। হিন্দুত্ব বিষয়ে পৌরাণিক আখ্যানের ব্যাখ্যায় তিনি টেনে এনেছেন সাহিত্য, আইন-কানুন, লিঙ্গ-সংস্কৃতি কিংবা জীববিদ্যার মতো বিষয়। Splitting the Difference (১৯৯৯) বইয়ের জন্য ২০০০ সালে তিনি পেয়েছিলেন পেন ওকল্যান্ড সাহিত্য সম্মান। তাঁর লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ বই Hindus: An Alternative History (২০১০) এবং দুটি স্মৃতিধর্মী বই The Donigers of Great Neck (২০১৯), An American Girl in India (২০২২)।

ছায়াছবির গতিপথ ও চিত্র-সাংবাদিকতা

সিনেমা পাড়া দিয়ে জীবনের প্রায় ছয়টি দশক মাথা উঁচু করে হেঁটে গেলেন তরুণ মজুমদার। জীবনকে ভালোবাসা আর ভালোবাসতে শেখানো—এই ছিল তাঁর সর্বক্ষণ চিন্তার কেন্দ্রে। তিনি কখনোই উচ্চকিত ছিলেন না। মাপা কথার চাপা মানুষ, কিন্তু ফাঁপা নন। প্রচারের দৌড়ে ছোটার জন্য তাঁকে সময় ব্যয় করতে হয়নি। ২০২০ সালের প্রণবেশ সেন স্মারক বক্তৃতায় তরুণ মজুমদার তাই নির্দ্বিধায় শনাক্ত করতে পারেন চলচ্চিত্রের বর্তমান কালো ছোপগুলিকে, অতীতের ঔজ্জ্বল্য আর নিজের সারা জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলতেও ভোলেন না।

তিনি বলেন: ‘‘আমি নিজে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তত্ত্বে বিশ্বাসী। সংসারে কোনওকিছুই স্থির, স্থবির হয়ে থাকতে পারে না। ভিতরে ভিতরে সর্বদাই একটা টানাপোড়েন চলতে থাকে—যার ফলে জীবন, সমাজ, শিল্প একটা গতিময়তা পায়। এই যে প্রতি পদক্ষেপে সামনের দিকে একটু একটু করে এগোনো—একে যদি আমরা ‘কোয়ান্টিটেটিভ চেঞ্জ’ অথবা পরিমাণগত বদল বলে ধরে নিই। তাহলে একটা সময় আসবেই আসবে যখন এই যাত্রাপথ হঠাৎ একটা অবিশ্বাস্য বৈপ্লবিক মোড় নেবে যার ফলে আগামী কয়েক প্রজন্মের পথরেখা চিহ্নিত হয়ে যাবে।’’ তাঁর বক্তৃতাটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হল।

কিনুন অনলাইনে: কলেজস্ট্রিট অথবা হারিতবুকস

বাঙলায় সমাজভাষাচর্চা

ভাষা আর সমাজ—পরস্পর বাঁধা অঙ্গাঙ্গি সম্পর্কে। ভাষাতত্ত্ববিদ ফিশম্যান খুব সুন্দর বলেছেন, ভাষা হলো ‘সামাজিক অবস্থান আর পারস্পরিক সম্পর্কবিন্যাসের সূচক।’ অঞ্চলের ভাষা, জনগোষ্ঠীর ভাষা, মেয়েদের নিজস্ব ভাষা, ভদ্র-অভদ্র ভাষা—বহুল বৈচিত্র্য সমাজভাষার। সমাজভাষা ভাষাতত্ত্বের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে গড়ে ওঠার আগেই বিভিন্ন বাংলা পত্রপত্রিকায় বহু রচনা প্রকাশিত হয়েছিল এইসব বিষয় নিয়ে। প্রকাশিত সেইসব লেখা থেকে বাচাই করে তৈরি বর্তমান সংকলনটি সমাজভাষাচর্চার ধারাবাহিকতাকে বোঝার এক আন্তরিক প্রয়াস। এই সংকলনে ভাষাবিদ্যার লব্ধপ্রতিষ্ঠ গবেষকের লেখা যেমন রয়েছে, তার বাইরেও এমন অনেকের লেখা আছে যাঁরা হয়তো ভাষাবিদ্যার গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত নন। সেদিক দিয়ে ভাষা আর সমাজকে কেন্দ্রে রেখে সংকলিত বাঙলায় সমাজভাষাচর্চা  বইটি ভাষাচর্চার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (জ. ১৯৫৪) গবেষক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক। ভাষাকে কেন্দ্রে করে বাংলার সমাজজীবন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনকে বোঝার প্রয়াস তাঁর চর্চার মূল ভরকেন্দ্র। ভাষাতত্ত্বে তাঁর আগ্রহ শিক্ষা-সাক্ষরতা নিয়ে জনজীবনের মধ্যে কাজের সূত্রে। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় কুড়িটি। প্রাসঙ্গিক দুটি বই:  অন্যশিক্ষার সন্ধানে (২০১২), ভাষা ভাষা কথা (২০১৫); সম্পাদিত বই: বাঙালির ভাষাচিন্তা (২০০১)। 

কিনুন অনলাইনে: কলেজস্ট্রিট অথবা হারিতবুকস

মধ্যযুগে বাংলায় প্রযুক্তি ও সমাজ বিবর্তন

মমতাজুর রহমান তরফদার

মধ্যযুগের ভারতের কতকগুলি আর্থ-সামাজিক সমস্যার যথার্থ মূল্যায়নের জন্য সে-কালের প্রযুক্তিসংক্রান্ত পরিস্থিতির বিচার-বিশ্লেষণ জরুরি। প্রযুক্তির প্রয়োগ আরো কতকগুলি উপাদানের ক্রিয়াশীলতার সঙ্গে সমন্বিত হয়ে মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবনে এবং তার চিন্তাচেতনায় গতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। কোনো সমাজে প্রযুক্তির প্রয়োগজনিত সাফল্য সেই সমাজটি আর্থনীতিক বিকাশের কোন পর্যায়ে অবস্থিত তার ওপর নির্ভর করে, অর্থাৎ সামন্ততান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার আওতায় প্রযুক্তির প্রয়োগ ভিন্ন ভিন্ন ফল দিতে পারে। মধ্যযুগের বাংলার রাজস্ব-ব্যবস্থায় কতকগুলি সামন্ততান্ত্রিক উপাদান স্পষ্ট, কিন্তু এর অর্থনীতির সার্বিকতায় নগরায়ণ ও বাণিজ্যের ভূমিকাও প্রবল। সে-যুগের বাংলার সমাজ ও অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করা হয়েছে এই বইতে। বাংলার শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কতকগুলি প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত আর্থ-সামাজিক বিবর্তনের প্রসঙ্গ এই আলোচনায় স্থান পেয়েছে.

এই রচনার প্রথম খসড়াটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসের প্রথম দিকে প্রদত্ত নবম সাইদুর রহমান ফাউন্ডেশন বক্তৃতামালার অন্তর্ভুক্ত।

মমতাজুর রহমান তরফদার (১ আগস্ট ১৯২৮ – ৩১ জুলাই ১৯৯৭) ছিলেন একজন বাংলাদেশি পণ্ডিত এবং ইতিহাসবিদ. তিনি সাহিত্য, ধর্ম ও বিভিন্ন বিষযে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ছাড়াও সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদ, আর্থসামাজিক ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চার সমস্যা নিয়ে একাধিক রচনা লিখেছেন। ইতিহাসবিদ হিসেবে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।

কিনুন অনলাইনে: কলেজস্ট্রিট অথবা হারিতবুকস

সংখ্যার জগৎ 

পলাশ বরন পাল

সংখ্যা ছাড়া কারুরই জীবন চলে না, কিন্তু সংখ্যা বলতে ঠিক কী বোঝায়, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে অনেকেই থতোমতো খাবেন। একদা সংখ্যা ছিলো শুধুই গোনার উপায়। সে সংজ্ঞায় এখন কাজ চলে না, এমন অনেক রকম সংখ্যার কথা জানা আছে যেগুলো গোনাগুনতির কাজে লাগে না। সংখ্যা তাহলে কী? সংখ্যার ব্যবহার আমাদের জীবনে কতোটা পরিব্যাপ্ত? এই সব প্রশ্নেরই উত্তর অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে এই বইয়ে।

সংখ্যা কি শুধুই গোনার উপায়? যদি বলি “হ্যাঁ’, তাহলে √2 কী? কতোরকমের সংখ্যা গোনার কাজে লাগে না? পূর্ণসংখ্যা যতোগুলো, একটা লাইনে কি ততোগুলো বিন্দু থাকে? নাকি এ প্রশ্ন অর্থহীন, যেহেতু দুটোই অসীম? কম্পিউটার কী করে রং চেনে? এইসব বিচিত্র প্রশ্ন নিয়ে এই বই।

‘ওরে বাবা, সংখ্যা-টংখ্যায় আমার ভীষণ ভয় – এ সব কথা বলে যাঁরা আনন্দ পান, তাঁদেরও জীবন কিন্তু সংখ্যা ছাড়া চলে না। সংখ্যা কাকে বলে, কীভাবে সংখ্যা দিয়ে আমাদের জীবন মোড়া, তারই বর্ণনা এই বইয়ে।

পলাশ বরন পাল (জন্ম ১৯৫৫) পেশায় পদার্থবিজ্ঞানী। ২০১৭-য় সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স থেকে অবসর নিয়ে এখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমেরিটাস অধ্যাপক। গবেষণাক্ষেত্রে মৌলিক নিবন্ধের সংখ্যা ১০০-র বেশি, বই পাঁচটি। সর্বজনের উপযোগী করে বিজ্ঞানের বিবিধ বিষয় নিয়ে বই লিখেছেন ডজনখানেক। তার জন্য পেয়েছেন ২০০৪ সালে রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, ২০১১ সালে রামেন্দ্রসুন্দর স্মৃতি পুরস্কার। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন, বাংলা থেকে ইংরিজিতে অনুবাদ করেছেন, ভাষা আর ব্যাকরণ নিয়ে লিখেছেন।

কিনুন অনলাইনে: কলেজস্ট্রিট অথবা হারিতবুকস

বেতাব চরিত 

নারায়ণ প্রসাদ বেতাব

অনুবাদ: অরিন্দম দাশগুপ্ত

হিন্দি রঙ্গমঞ্চের আলোচনা করতে হলে পার্সি থিয়েটারের কথা না বললে সেই আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আবার পার্সি থিয়েটারের সাফল্যের ইতিহাস তৈরিই হয়েছে নাটকের সঙ্গে যুক্ত নাট্যকার ও নাট্যকর্মীদের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতায়। আফসোস একটাই যে পেশার সঙ্গে যুক্ত সেই মানুষগুলি নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা খুব কমই লিপিবদ্ধ করেছেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যতিক্রম নারায়ণ প্রসাদ বেতাব। তাঁর রচিত আত্মকথনই হল ‘বেতাব চরিত’। বইটি হিন্দি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন অরিন্দম দাশগুপ্ত।

অরিন্দম দাশগুপ্ত (১৮৭২-১৯৪৫)। প্রবন্ধকার, সম্পাদক ও অনুবাদক। ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের কাজ করছেন দীর্ঘদিন। নানা সময়ে তাঁর বই প্রকাশিত হয়েছে ওরিয়েন্ট লংম্যান, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, চর্চাপদ, আনন্দ পাবলিশার্স প্রভৃতি প্রকাশনা সংস্থা থেকে। বইগুলোর বিষয়বৈচিত্র্য প্রমাণ করে তাঁর উৎসাহের পরিধি। গ্রন্থ সম্পাদনাতেও তিনি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ছাপ রেখেছেন। হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার এটিই তাঁর প্রথম প্রচেষ্টা। তাঁর আরেকটি উৎসাহের বিষয় কয়েক দশক ধরে হস্তশিল্পের নানা ধারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা।

কিনুন অনলাইনে: কলেজস্ট্রিট অথবা হারিতবুকস

অবিরত দ্বৈরথে বিজ্ঞান: হিন্দু-ইসলামি-খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি বলয় 

আশীষ লাহিড়ী

খ্রিস্টধর্ম-কবলিত ইউরোপের তামস যুগে গ্রিক বিজ্ঞানের ঐতিহ্য বিনাযুদ্ধে নতি স্বীকার করেছিল। পরে ইসলামের বৈপ্লবিক সংস্পর্শে এসে ইউরোপে বিজ্ঞান অবশেষে জিতল। খ্রিস্টধর্মই তখন বিজ্ঞানের সঙ্গে আপোশ করবার জন্য উৎসুক হয়ে উঠল। অপরদিকে যে-ইসলাম ইউরোপকে নতুন করে বিজ্ঞান চেনাল, গত অন্তত আটশো বছর ধরে সেই ইসলামি কৃষ্টি-বলয়ে ধর্মই প্রভু, বিজ্ঞান পরাজিত। আর হিন্দু কৃষ্টি বলয়ে? সেখানে বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মর কোনো জোরালো সংঘাতই কোনোদিন বাধেনি। ভারতের মহা-মহাবিজ্ঞানীরা অনায়াসেই অতি উচ্চমার্গের বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি পদে পদে ধর্মের সঙ্গে আপোশ করে নিয়েছিলেন। ব্যতিক্রম কেবল আর্যভট। আজকের হিন্দুত্ববাদ-কবলিত উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতে সেই ধর্ম-বিজ্ঞান সহাবস্থানের ঐতিহ্য আরও শক্তিশালী হয়েছে। কেন এমন হয়? বিজ্ঞানের ইতিহাস মন্থন করে সেইসব প্রশ্নের তথ্যসমর্থিত উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এই বইতে।

আশীষ লাহিড়ী (জন্ম ১৯৪৮)। বিজ্ঞানের ইতিহাস, বিজ্ঞানের দর্শন ও সাহিত্য বিষয়ে অনেকগুলি ইংরেজি ও বাংলা গ্রন্থের লেখক। এশিয়াটিক সোসাইটি, ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়াম্স-এ বিজ্ঞানের ইতিহাস পড়িয়েছেন। বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলকাতায় (আই আই এস ই আর) বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের দর্শন বিষয়ে আমন্ত্রিত শিক্ষক। তিনি জে ডি বার্নাল-এর Science in History-র বঙ্গানুবাদের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি আনন্দ পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার ও ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

কিনুন অনলাইনে: কলেজস্ট্রিট অথবা হারিতবুকস