দীপেশ চক্রবর্তী
‘বাংলায় আমি যখন লিখি বা কথা বলি, তখন আমার মনের মধ্যে ধরে রাখা এক স্মৃতির দেশের সঙ্গে কথা বলি। দেশ বদলে গেছে, আমিও বদলে গিয়েছি, কিন্তু মায়ায় ধরে রাখি কিছু বন্ধুত্ব, কিছু ভালোবাসার বন্ধন, কিছু সঙ্গের লোভ। এসব কথা ইংরেজিতে পেশাদারি রচনায় সচরাচর প্রকাশ পায় না। অথচ আমার ইতিহাসবিদ মনকে এই মায়ার বন্ধনই বলে দেয় অতীত আমাদের কাছে কত বড়ো একটা কিছু। একথা বাঙালি বা কোনো দিশি বন্ধুকেই বলতে পারি, অবুঝ অন্যরা তো শুধু “নস্টালজিক” বলে গাল দেবে! এই সহমর্মিতার সন্ধানও কিন্তু আমার অতীত-অনুসন্ধানেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
তিনটি বর্গে বিন্যস্ত হলেও এই লেখাগুলো বায়ুনিরুদ্ধ সংকলন নয়। দীপেশ চক্রবর্তীর লেখায় যেমন থাকে যে পরতে পরতে খুলে যায় চিন্তাভাবনার জগৎ, এও তাই। প্রশ্ন উঠতে পারে যে স্মৃতি আর সত্তার মিল অমিল নিয়ে। কিন্তু একবার যদি ভেবে দেখি আমাদের এই বর্তমান, প্রতিদিনের সত্তার মাঝে অনেক পুরোনো কথা রয়ে যায়, তাহলে সময়কথন আর সেইসব সময়ের আপাত ভগ্নাংশ কখন বুঝি ইতিহাসের আখ্যান হয়ে ওঠে। এই ইতিহাস আমাদের যাপিত অভিজ্ঞতারই আরেক বৃত্তান্ত।
দীপেশ চক্রবর্তী জন্ম ১৯৪৮ সালে ১৫ ডিসেম্বর, কলকাতায়। প্রেসিডেন্সি কলেজে স্নাতকস্তরে পদার্থবিদ্যা ও আইআইএম থেকে এমবিএ-র পাঠ শেষ করে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-তে যান ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করতে। ১৯৮৪ সালে শ্রমিক ইতিহাসের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে শিকাগো ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের লরেন্স এ কিম্পটন ডিস্টিংগুইশ্ড সার্ভিস প্রফেসর। ইতিহাস-চর্চায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রথম ভারতীয় হিসেবে পেয়েছেন টয়েনবি ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০১৪)। অবসরে আড্ডা দেওয়া, প্রচলিত গানের প্যারডি করা আর ছড়া লেখার মধ্যে পান প্রাণের আরাম।