বইমেলা ২০২২, নির্ঝর-এর প্রথম প্রকাশনা

বিজ্ঞান বনাম ধর্ম, দ্বন্দ্ব ও আপোশ

খ্রিস্টধর্ম-কবলিত ইউরোপের তামস যুগে গ্রিক বিজ্ঞানের ঐতিহ্য বিনাযুদ্ধে নতি স্বীকার করেছিল। পরে ইসলামের বৈপ্লবিক সংস্পর্শে এসে ইউরোপে বিজ্ঞান অবশেষে জিতল। খ্রিস্টধর্মই তখন বিজ্ঞানের সঙ্গে আপোশ করবার জন্য উৎসুক হয়ে উঠল। অপরদিকে যে-ইসলাম ইউরোপকে নতুন করে বিজ্ঞান চেনাল, গত অন্তত আটশো বছর ধরে সেই ইসলামি কৃষ্টি-বলয়ে ধর্মই প্রভু, বিজ্ঞান পরাজিত। আর হিন্দু কৃষ্টি বলয়ে? সেখানে বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মর কোনো জোরালো সংঘাতই কোনোদিন বাধেনি। ভারতের মহা-মহাবিজ্ঞানীরা অনায়াসেই অতি উচ্চমার্গের বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি পদে পদে ধর্মের সঙ্গে আপোশ করে নিয়েছিলেন। ব্যতিক্রম কেবল আর্যভট। আজকের হিন্দুত্ববাদ-কবলিত উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতে সেই ধর্ম-বিজ্ঞান সহাবস্থানের ঐতিহ্য আরও শক্তিশালী হয়েছে। কেন এমন হয়? বিজ্ঞানের ইতিহাস মন্থন করে সেইসব প্রশ্নের তথ্যসমর্থিত উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এই বইতে।

আশীষ লাহিড়ী (জন্ম ১৯৪৮)। বিজ্ঞানের ইতিহাস, বিজ্ঞানের দর্শন ও সাহিত্য বিষয়ে অনেকগুলি ইংরেজি ও বাংলা গ্রন্থের লেখক। এশিয়াটিক সোসাইটি, ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়াম্স-এ বিজ্ঞানের ইতিহাস পড়িয়েছেন। বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলকাতায় (আই আই এস ই আর) বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের দর্শন বিষয়ে আমন্ত্রিত শিক্ষক। তিনি জে ডি বার্নাল-এর Science in History-র বঙ্গানুবাদের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি আনন্দ পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার ও ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।


হিন্দি মঞ্চ: ঊষালগ্নের এক কথক

হিন্দি রঙ্গমঞ্চের আলোচনা করতে হলে পার্সি থিয়েটারের কথা না বললে সেই আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আবার পার্সি থিয়েটারের সাফল্যের ইতিহাস তৈরিই হয়েছে নাটকের সঙ্গে যুক্ত নাট্যকার ও নাট্যকর্মীদের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতায়। আফসোস একটাই যে পেশার সঙ্গে যুক্ত সেই মানুষগুলি নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা খুব কমই লিপিবদ্ধ করেছেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যতিক্রম নারায়ণ প্রসাদ বেতাব। তাঁর রচিত আত্মকথনই হল ‘বেতাব চরিত’। বইটি হিন্দি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন অরিন্দম দাশগুপ্ত।

অরিন্দম দাশগুপ্ত (১৮৭২-১৯৪৫)। প্রবন্ধকার, সম্পাদক ও অনুবাদক। ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের কাজ করছেন দীর্ঘদিন। নানা সময়ে তাঁর বই প্রকাশিত হয়েছে ওরিয়েন্ট লংম্যান, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, চর্চাপদ, আনন্দ পাবলিশার্স প্রভৃতি প্রকাশনা সংস্থা থেকে। বইগুলোর বিষয়বৈচিত্র্য প্রমাণ করে তাঁর উৎসাহের পরিধি। গ্রন্থ সম্পাদনাতেও তিনি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ছাপ রেখেছেন। হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার এটিই তাঁর প্রথম প্রচেষ্টা। তাঁর আরেকটি উৎসাহের বিষয় কয়েক দশক ধরে হস্তশিল্পের নানা ধারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা।


সংখ্যার সাতকাহন

সংখ্যা ছাড়া কারুরই জীবন চলে না, কিন্তু সংখ্যা বলতে ঠিক কী বোঝায়, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে অনেকেই থতোমতো খাবেন। একদা সংখ্যা ছিলো শুধুই গোনার উপায়। সে সংজ্ঞায় এখন কাজ চলে না, এমন অনেক রকম সংখ্যর কথা জানা আছে যেগুলো গোনাগুনতির কাজে লাগে না। সংখ্যা তাহলে কী? সংখ্যার ব্যবহার আমাদের জীবনে কতোটা পরিব্যাপ্ত? এই সব প্রশ্নেরই উত্তর অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে এই বইয়ে।

সংখ্যা কি শুধুই গোনার উপায়? যদি বলি “হ্যাঁ’, তাহলে √2 কী? কতোরকমের সংখ্যা গোনার কাজে লাগে না? পূর্ণসংখ্যা যতোগুলো, একটা লাইনে কি ততোগুলো বিন্দু থাকে? নাকি এ প্রশ্ন অর্থহীন, যেহেতু দুটোই অসীম? কম্পিউটার কী করে রং চেনে? এইসব বিচিত্র প্রশ্ন নিয়ে এই বই।

‘ওরে বাবা, সংখ্যা-টংখ্যায় আমার ভীষণ ভয় – এ সব কথা বলে যাঁরা আনন্দ পান, তাঁদেরও জীবন কিন্তু সংখ্যা ছাড়া চলে না। সংখ্যা কাকে বলে, কীভাবে সংখ্যা দিয়ে আমাদের জীবন মোড়া, তারই বর্ণনা এই বইয়ে।

পলাশ বরন পাল (জন্ম ১৯৫৫) পেশায় পদার্থবিজ্ঞানী। ২০১৭-য় সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স থেকে অবসর নিয়ে এখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমেরিটাস অধ্যাপক। গবেষণাক্ষেত্রে মৌলিক নিবন্ধের সংখ্যা ১০০-র বেশি, বই পাঁচটি। সর্বজনের উপযোগী করে বিজ্ঞানের বিবিধ বিষয় নিয়ে বই লিখেছেন ডজনখানেক। তার জন্য পেয়েছেন ২০০৪ সালে রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, ২০১১ সালে রামেন্দ্রসুন্দর স্মৃতি পুরস্কার। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন, বাংলা থেকে ইংরিজিতে অনুবাদ করেছেন, ভাষা আর ব্যাকরণ নিয়ে লিখেছেন।