নব্যবিজ্ঞানে অনির্দেশ্যবাদ

প্রমথনাথ সেনগুপ্ত

গ্যালিলিও-নিউটনের যুগ থেকে আজও আমাদের ভাবনার ভিত ধরে রেখেছে কার্যকারণ-বাদ। এরই মাঝে বিশ শতকের গোড়ায় পদার্থের বিবিধ আচরণের ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে অবতারণা করা হল কোয়ান্টাম তত্ত্বের। কিন্তু এই তত্ত্বটির কেন্দ্রীয় চরিত্র এমন যে তার সঙ্গে আমাদের রোজকার বোধের সংঘাত অবশ্যম্ভাবী। নেহাত অতি ক্ষুদ্র কিংবা অতি বৃহৎকে বাদ দিয়েই আমাদের আটপৌরে জীবন চলে যায় তাই, কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রভাব আমাদের বহু শতাব্দীর ভাবনার অভ্যাসকে বিপর্যস্ত করতে পারে না। কোয়ান্টাম তত্ত্ব যখন প্রায় সাবালক সেই সময়ে প্রমথনাথ সেনগুপ্ত এই ছোট্ট বইটি রচনা করেন। এখানে তিনি কার্যকারণ-বাদের ওপর কোয়ান্টাম তত্ত্বের আঘাত সম্পর্কে আমাদের চোখ খুলে দিতে চেয়েছিলেন। সেই কালের নিরিখে এগিয়ে থাকা এই প্রাঞ্জল রচনা কোয়ান্টাম তত্ত্বের কেন্দ্রেও আলো ফেলেছে।

প্রমথনাথ সেনগুপ্ত 

জন্ম ১৯০৭/৮-এর ফেব্রুয়ারি মাসে। জন্মস্থান ঢাকা। পিতার নাম কালীনাথ সেনগুপ্ত। ১৯২৪-এ প্রমথনাথ পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেইসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ছিলেন অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তিনি কলকাতা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন ১৯২১-এ। এম এসসি-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন প্রমথনাথ। ১৯৩৩ অবধি প্রমথনাথ তাঁরই কাছে গবেষণাকর্মে নিযুক্ত থাকেন। ১৯৩৪ সালের জুলাই মাসে তিনি বিশ্বভারতীতে যোগ দেন। রবীন্দ্রনাথের একমাত্র বিজ্ঞানগ্রন্থ ‘বিশ্বপরিচয়’ লেখায় সহায়তা করেছিলেন। ১৯৫১-তে খড়্গপুর আইআইটি প্রতিষ্ঠিত হলে প্রতিষ্ঠাতা-সর্বাধ্যক্ষ জ্ঞানচন্দ্র ঘোষের আহ্বানে তিনি প্রথম রেজিস্ট্রার ও বোর্ড অফ গভর্নরস্‌-এর অন্যতম সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৫৬-র নভেম্বরে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি (টেকনিক্যাল এডুকেশন) পদে আসীন হন।উল্লেখ্য, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষাসচিব ছিলেন ধীরেন্দ্রমোহন সেন এবং কেন্দ্রে শিক্ষামন্ত্রী মৌলনা আবুল কালাম আজাদ। সরকারি চাকরি থেকে প্রমথনাথ অবসর নেন ১৯৬৬-তে। কর্মজীবনের শেষ পর্বে তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বি এড (সায়েন্স) প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পদার্থবিদ্যার রীডার হিসেবে (১৯৬৬-৭২) যুক্ত ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে প্রমথনাথের যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল।ক্রীড়ামোদী মানুষ ছিলেন, ছাত্রাবস্থায় টেনিস খেলায় ডিস্‌ট্রিক্ট চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন। সংগীতপ্রিয়, অন্তর্মুখী এই মানুষটির জীবনাবসান হয় কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবাপ্রতিষ্ঠানে, চুয়াত্তর বছর বয়সে, ২৯ মার্চ ১৯৮১-তে। প্রমথনাথের বাংলায় লেখা বইয়ের সংখ্যা হল মোট পাঁচটি।